কমিক দুনিয়ার দুই মহারথী ব্যাটম্যান আর সুপারম্যানের দ্বৈরথ দেখার জন্য ভক্তরা অপেক্ষা করেছেন পুরো তিনটি বছর।
নতুন
ব্যাটম্যান,
ওয়ান্ডার
উইম্যান,
অন্য
রকমের
লেক্স
লুথর
- এ
সিনেমায়
দর্শক
আকৃষ্ট
করার
উপাদানকম
নয়। আর ঘটেছেও তাই।
পৃথিবীজুড়ে
প্রেক্ষাগৃহে
দর্শক
ভেঙে
পড়েছে
সুপারহিরোবহুল
এই
সিনেমা
দেখতে। তবে সত্যিই কি সিনেমাটি মেটাতে পেরেছে সব দাবি; নাকি গোঁজামিলের জালেই আটকে গেছে গল্প?
জ্যাক স্নাইডারের ব্রুস ওয়েইন এখনও আগের মতোই অহঙ্কারী আর পোড় খাওয়া এক জেদী ধনকুবের। রবিনের মৃত্যুর পরে ব্যাটম্যান তার নিঃশব্দ রক্ষকের ভূমিকা থেকে সরে এসেছেন অনেকটাই। অপরাধীদের কেবল শাস্তি দেওয়া নয়, তাদেরকে নিঃশ্চিহ্ণ করে ফেলতেও এখন হাত কাঁপে না তার।
জ্যাক স্নাইডারের ব্রুস ওয়েইন এখনও আগের মতোই অহঙ্কারী আর পোড় খাওয়া এক জেদী ধনকুবের। রবিনের মৃত্যুর পরে ব্যাটম্যান তার নিঃশব্দ রক্ষকের ভূমিকা থেকে সরে এসেছেন অনেকটাই। অপরাধীদের কেবল শাস্তি দেওয়া নয়, তাদেরকে নিঃশ্চিহ্ণ করে ফেলতেও এখন হাত কাঁপে না তার।
প্রতিহিংসার আগুনে পুড়তে থাকা ব্যাটম্যান ওরফে ব্রুস চটে যান সুপারম্যানের ধ্বংসযজ্ঞের নমুনা দেখে।
জেনারেল
জডের
সঙ্গে
'ম্যান
অফ
স্টিল'-এর লড়াইয়ে ধুলোয় মিশে যায় ওয়েইন ফাইন্যান্সিয়ালস
ভবন,
নিহত
হয়
অসংখ্য
মানুষ। সুপারম্যানের ধ্বংসযজ্ঞ দেখে তার প্রতি ব্রুসের অদমনীয় ঘৃণা জন্ম নেয়, তাকে থামাতে কোমর বেঁধে তৈরি হয় সে।
আর এই ব্যাপারটিই বুমেরাং হয়ে দাড়ালো গল্পকাঠামোর জন্য।
কারণ
ব্যাটম্যান
নিজেই
আর
হাত
রক্তাক্ত
করতে
দ্বিধাবোধ
করেন
না। ব্যাটমোবিল থেকে আগুনের হলকার ঝলকে আট দশটা গাড়ি পুড়ে যাওয়া কিংবা মিসাইল লঞ্চারে টার্গেট করা ট্রাকটির পরিবর্তে অন্য একটি বাড়ি ধসে পড়লেও তার ভ্রুক্ষেপ নেই।
সুপারম্যানকে এবার সরাসরি তুলনা করা হয়েছে ঈশ্বরের সঙ্গে।
তবে
এর
পটভূমি
খুবই
মাকর্িন।
মেট্রোপলিসে
জেনারেল
জডের
ধ্বংসযজ্ঞকে
তুলনা
করা
যেতে
পারে
৯/১১ সন্ত্রাসী
হামলার
সঙ্গে;
স্নাইডার
এখানে
জডকে
উপস্থাপন
করেছেন
জঙ্গিদের
প্রতীক
হিসেবে। সেখান থেকে সুপারম্যানের ঘুরে দাড়ানোর প্রচেষ্টা যেন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা যুক্তরাষ্ট্রের
নিজের
যাবতীয়
কর্মকাণ্ডকে
জায়েজ
করার
চেষ্টা। ‘ম্যান অফ স্টিল’ আর ‘ডন অফ জাস্টিস’-দুই সিনেমাতেই স্নাইডার অতিমানব সুপারম্যানের ‘মানুষ’ হয়ে ওঠার চেষ্টাকে
দেখানো
হয়েছে। অতি ক্ষমতাধর যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাগিরি, দখলদারী
আর
আগ্রাসনের
মাধ্যমে
পৃথিবীকে
অপশক্তির
হাত
থেকে
বাঁচানোর
চেষ্টার
প্রতীক
হয়ে
ওঠে
সুপারম্যান।
সামনেই আসছে
মার্কিন প্রেসিডেনশিয়াল নির্বাচন। ২০১২ সালের
নির্বাচনের আগে
মুক্তি পায়
'ব্যাটম্যান: দ্য
ডার্ক নাইট
রাইজেস'। নির্বাচনের
আগে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বহির্শক্তির আক্রমণ
এবং সর্বোপরি
‘গণতন্ত্র'কে
সমুন্নত রাখার
বিষয়টি তুলে
ধরার চেষ্টা
বরাবরই ধরা
পড়েছে ডিসির
সিনেমাগুলোর ফ্রেমে।
এবারও ব্যতিক্রম
হয়নি।
‘ব্যাটম্যান
ভার্সেস সুপারম্যান:
ডন অফ
জাস্টিস’-এর সবচেয়ে
বড় ব্যার্থতা
হলো একজন
শক্তিশালী খলনায়কের
অভাব। লেক্স
লুথার কি
আসলে ক্ষমতালোভী,
বিশুদ্ধ শয়তান
না কি
মানসিকভাবে অসুস্থ
- তা স্পষ্ট
হয় না।
তবে দোষটা
অভিনেতা জেসি
আইজেনবাগর্ের নয়
মোটেই। কোনো
স্পষ্ট কারণ
ছাড়াই বার
বার সে সুপারম্যানের
অস্তিত্বকে বিলীন
করার চেষ্টা
করে। কিন্তু
কোনোটাই সফল
হয় না।
বিশেষ করে
সিনেমার শেষ
অংশে অনেকটা
জোর করেই
ডুমসডের মতো
একটি চরিত্রকে
ঢোকানোর কোনো
মানে খুঁজে
পাওয়া যায়
না। চিত্রনাট্য
জুড়েই যে
অসংখ্য ফাঁক
ফোকর উঁকি
দিয়েছে, তার
মধ্যে এটিই
ছিল সবচেয়ে
বড়।
পুরো সিনেমাতেই ব্যাখ্যা
না দিয়ে
নানা ঘটনার
অবতারণা করেছেন
স্নাইডার। কমিকের
সঙ্গে যেসব
দর্শকের পরিচয়
নিয়ে কিংবা
'ম্যান অফ
স্টিল’ যাদের দেখার
সুযোগ ঘটেনি
তাদের জন্য
সিনেমাটি উপভোগ
করা একটু
কষ্টকর হয়ে
উঠবে।
চিত্রনাট্যকার ডেভিড এস
গয়ারও দোষের
বোঝা এড়াতে
পারেন না,
যেখানে তিনি
আগের 'ব্যাটম্যান'
সিরিজেও কাজ
করেছেন। তার
মতো গুণী
এক চিত্রনাট্যকারের কাছ থেকে এ
ধরনের ঝুলে
পড়া কাহিনি
আসাটা হতাশাজনক।
কম্পিউটার জেনারেটেড
ইমেজারির বলিহারি
উপস্থিতি আর
মার মার
কাট কাট
অ্যাকশন দেখিয়ে
দিলেই তা
সিনেমা হয়
না, সেটি
প্রমাণিত হয়েছে
এই সিনেমার
বেলায়।
এবার আসা
যাক, কলাকুশলীদের
অভিনয় প্রসঙ্গে।
সুপারম্যান হিসেবে
হেনরি ক্যাভিল
মানানসই, অন্তত
'ম্যান অফ
স্টিল' থেকে
নিজেকে তিনি
ভালভাবেই গুছিয়ে
এনেছেন 'ডন
অফ জাস্টিস'-এ। তবে
সত্যিকারের বাহবাটা
পাবেন নয়া
ব্যাটম্যান বেন
অ্যাফ্লেকই। তার
অভিনয়ে ফুটে
উঠেছে ব্রুস
ওয়েইনের দীর্ঘ
দিন ধরে
জমে থাকা
ক্রোধ, নশ্বর
মানুষ হয়ে
অতিমানবের মুখোমুখি
হওয়ার অসহায়ত্ব,
অশুভকে রুখে
দাড়ানোর অদম্য
জেদ। দর্শকদের কাছে
ইতোমধ্যে সেরা
ব্যাটম্যানের খেতাব
জিতে গেছেন
অ্যাফ্লেক।
ওয়ান্ডার উইম্যান হিসেবে
গ্যাল গ্যাডটের
উপস্থিতিটা অতটা
গুরুত্ব পায়নি,
যতটা ভাবা
হয়েছিল। তবে
অভিব্যক্তি এবং
মারমুখী অবতারে
প্রত্যাশা মেটাতে
পেরেছেন তিনি।
হ্যান্স জিমারের আবহ
সঙ্গীতের প্রশংসা
করতেই হয়।
সিনেমাটির দুর্বল জায়গা
এত বেশি
যে সিনেমার
ইতিবাচক উপকরণ
খুঁজতে আড়াই
ঘন্টার সিনেমাটি
দেখতে হবে
আতশ কাঁচের
নিচে। যদিও
কমিক বইয়ের
পাঁড় ভক্তদের
কাছে এই
সিনেমাটিই শতাব্দীর
সেরা সুপারহিরো
মুভি নির্বাচিত
হয়েছে। ‘ব্যাটম্যান ভার্সেস সুপারম্যান:
ডন অফ
জাস্টিস'-এ
লড়াইটা ঈশ্বর
বনাম মানুষের,
আলো বনাম
অন্ধকারের। আর
পর্দার বাইরের
বাস্তব জগতে
সে লড়াইটা
এখন ভক্ত
আর সমালোচকদের।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
No comments:
Post a Comment