একবার এক নাস্তিক (যে আল্লাহর অস্তিত্বের কথা বিশ্বাস করে না, আসলে ও জানে না)
এক দরবেশের কাছে এসে চারটি প্রশ্ন করে তার জবাব জানতে চাইল। প্রশ্ন চারটি হলো :
১. বলা হয় যে, আল্লাহ সব জায়গায়ই আছেন, যদি থেকেই থাকেন তবে আমরা তাকে দেখতে পাই
না কেন?
.
২. না দেখেই আল্লাহকে বিশ্বাস করার কথা বলা হয় কেন?
.
৩. ইবলিস তথা গোটা জিন জাতি আগুনের তৈরি। ওরা দোজখের আগুনে কিভাবে পুড়বে?
অর্থাৎ আগুনকে আগুন দিয়ে কিভাবে পোড়ান যাবে।
.
৪. বলা হয় যে, আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কিছুই হয় না। তাই যদি হয়, তাহলে মানুষ তার কৃতকর্মের জন্য
শাস্তি পাবে কেন?
.
দরবেশ নাস্তিক লোকটির প্রশ্নগুলো শুনে কৃত্রিম ক্রোধ দেখিয়ে একটি মাটির ঢেলা তার দিকে
ছুড়ে মারলেন। লোকটির মাথায় আঘাত লেগে কেটে গেল। আহত লোকটি কাজির দরবারে
দরবেশের বিরুদ্ধে নালিশ করল। কাজি ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ শুনে দরবেশকে লোকটির মথায়
এভাবে আঘাত করার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। দরবেশ উত্তরে বললেন : আমি তো তার চারটি
প্রশ্নের জবাবই দিয়েছি মাত্র; তাকে আহত করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না।
.
ঢিল ছুড়ে কিভাবে প্রশ্ন চারটির জবাব দেয়া হলো এ রহস্য উদঘাটন করার অনুরোধ করা হলে
দরবেশ জবাব দিলেন। লোকটির প্রশ্ন হলো : আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান থাকলেও তাকে দেখা
যায় না কেন? জবাব হলো : ঢিলের আঘাতে এ ব্যক্তি ব্যথা পেয়েছে, বলছে। ব্যথার যদি
অস্তিত্ব থেকে থাকে তবে তা দেখা যায় না কেন?
.
ব্যথা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও যেমন তা চোখে দেখা যায় না তেমনি আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান
থাকা সত্ত্বেও থাকে চর্মচক্ষে দেখা যায় না।
.
তার দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো : আল্লাহকে না দেখে বিশ্বাস করব কেন?
চোখে না দেখে যদি ব্যথার কথা বিশ্বাস করা যায় তবে আল্লাহকে না দেখে বিশ্বাস করার কী অসুবিধা?
.
তার তৃতীয় প্রশ্ন হলো : শয়তান ও জিন আগুনের তৈরি হয়েও দোজখের আগুনে পুড়বে কিভাবে?
মানুষ তো মাটির তৈরি। মাটির তৈরি মানুষকে যদি মাটির ঢেলার আঘাতে কষ্ট দেয়া যায়, তবে
আগুনের তৈরি জিনকে আগুনে পোড়ান কি তেমন কষ্টকর?
.
তার চতুর্থ প্রশ্ন হলো : আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কোন কিছুই ঘটে না, তাহলে মানুষের কৃতকর্মের
জন্য মানুষকে শাস্তি দেয়া হবে কেন?
.
আল্লাহর ইচ্ছায়ই যখন সব হয় তবে ঢিল ছোড়া, তার গায়ে আঘাত লাগা, রক্তপাত ও ব্যথা
সবইতো তার ইচ্ছায়ই হয়েছে, সুতরাং এ ব্যাপারে অভিযোগ করার কী আছে? এরও যদি অভিযোগ ও
বিচার চলে এবং শাস্তি বর্তায়, তবে মানুষের কৃতকর্মের বিচার, সুফল ও কুফল ভোগ কেন মিথ্যা হবে?
.
মানুষ সৃষ্ট বলেই তার দৈহিক ও জৈব গতিবিধি এবং মানসিক বৃত্তি ও বুদ্ধিমত্তা সীমিত।
সাধনাবলে মানুষ যতই ঊর্ধ্বে উঠুক না কেন, অসীমের জ্ঞান লাভ করা তার পক্ষে অসম্ভব।
কারণ তার ধারণা, ক্ষমতা ও আধারই অসম্পূর্ণ সৃষ্ট। সুতরাং সীমিত। স্রষ্টার জ্ঞান অসীম আর
সৃষ্টির সাধনালব্ধ জ্ঞান সামান্য মাত্র। আল্লাহ তার অসীম জ্ঞান থেকে সামান্য মাত্র মানুষকে দিয়েছেন।
.
সুতরাং, সবই আল্লাহর কুদরত। আমরা যদি কেবলমাত্র মিথ্যা দূর করে সত্য গ্রহণ করতে
পারি, তবেই স্রষ্টার সৃষ্টির উদ্দেশ্য সার্থক হবে ।
পোস্টটি করেছেন ঃ Sayeem Ahmed
No comments:
Post a Comment